রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

↔ উসমান(রা) এর উপরে উত্থাপিত অভিযোগ এর জবাবঃ

ইসলামের তৃতীয় খলিফা,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ২ কন্যার জামাতা উসমান যিননূরাইন(রা) এর ব্যাপারে পরবর্তী যামানার কিছু ব্যক্তির উত্থাপিত অভিযোগ এবং মহান সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন উমর(রা) কর্তৃক সেগুলার রদ ও ব্যাখ্যা প্রদান আমরা সহি সূত্রের বর্ণনায় জেনে নেইঃ-
‘উসমান ইবন মাওহাব(রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক মিসরবাসী মক্কায় এসে হজ্জ করে দেখতে পেল যে, কিছু লোক একত্রে বসে আছে। সে বলল, এ লোকজন কারা? বললেন, ইনি ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন ‘উমর(রাঃ)। সে ব্যক্তি (তাঁর নিকট এসে) বলল, হে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন ‘উমর (রাঃ), আমি আপনাকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করব; আপনি আমাকে বলুন,
(১) আপনি কি এটা জানেন যে, ‘উসমান(রাঃ) উহুদ যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে গিয়েছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ।
(২) সে বলল, আপনি জানেন কি ‘উসমান(রাঃ) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন? ইব্‌ন ‘উমর(রাঃ) উত্তরে বললেন, হাঁ।
(৩) ‘আপনি জানেন কি, বায়’আত রিযওয়ানে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন?’ ইব্‌ন ‘উমর(রাঃ) বললেন, হাঁ।
লোকটি বলে উঠল, আল্লাহু আকবার। ইব্‌ন ‘উমার(রাঃ) তাকে বললেন, এস, তোমাকে আসল ঘটনা বলে দেই। ‘উসমান (রাঃ) –এর উহুদ যুদ্ধ হতে পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ তাঁকে মাফ করে দিয়েছেন ও ক্ষমা করেছেন। আর তিনি বদর যুদ্ধে এজন্য অনুপস্থিত ছিলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কন্যা, তাঁর স্ত্রী রোগাক্রান্ত ছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, বদরে অংশ গ্রহণকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব ও গনীমতের অংশ মিলবে। আর বায়’আত রিযওয়ান হতে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হল, মক্কার বুকে তাঁর চেয়ে সম্ভ্রান্ত অন্য কেউ যদি থাকতো তবে তাকেই তিনি ‘উসমানের বদলে পাঠাতেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান(রাঃ) –কে মক্কায় পাঠান। এবং তাঁর চলে যাবার পর বায়’আত রিযওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। তখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এটি ‘উসমানের হাত। অতঃপর ডান হাত বাম হাতে স্থাপন করে বললেন যে, এ হল ‘উসমানের বায়’আত। ইব্‌ন ‘উমার(রাঃ) ঐ লোকটিকে বললেন, তুমি এই জবাব তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও।
[সহি বুখারী ৩৪৩৩; সুনানে তিরমীযি ৩৭০৬]
উসমান(রা)এর ত্রুটি অনুসন্ধানকারী ঐ ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরের সাথে তার পটভূমি এবং উসমান(রা)এর উপরে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল(ﷺ)এর প্রকাশিত মতও জানিয়ে দিলেন ইবন উমর(রা)। বদর যুদ্ধে উসমান(রা) পিছে রয়ে যান কারণ,তাঁর স্ত্রী- রাসূল(ﷺ) এর কন্যা রুকাইয়্যা(রা) অসুস্থ ছিলেন এবং তাঁকে দেখভালের আবশ্যকতায়, রাসূল(ﷺ)এর সম্মতিকর্মে। বদর থেকে ফিরে এসে দেখেন রুকাইয়্যা(রা) ইন্তিকাল করেছেন, এরপরে রাসূল(ﷺ) এর আরেক কন্যাকে উসমান(রা)এর সাথে বিবাহ করান।
উহুদ যুদ্ধের সময় মুসলিমরা নিজেদের বিজয়ী মনে করে ফেলেছেন, এমন সময়ে মুশরিকদের অতর্কিত আক্রমণে সাহাবীরা অল্প কয়েকজন বাদে সবাই ছুটাছুটি করে এদিক সেদিক ছুটে যান, কিন্তু আল্লাহ্‌ তায়ালা কুরআনে এই আয়াত- “যেদিন দু’দল(মুসলিম ও কাফির) পরস্পর মুখোমুখি হয়েছিল,সেদিন তোমাদের মধ্য হতে যারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল,তাঁদের কোন কৃতকর্মের জন্য শয়তান তাঁদের পদস্খলন ঘটিয়েছিল।অবশ্য আল্লাহ্‌ তাঁদের ক্ষমা করে দিয়েছেন; আল্লাহ্‌ ক্ষমাপরায়ণ ও পরম সহনশীল” {সূরা আ’লে ইমরানঃ আয়াত ১৫৫} আল্লাহ্‌ নিজেই যেখানে ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন এরপরে কোন মাখলুকের আর আপত্তির স্থান থাকেনা।
৬ষ্ঠ হিজরির হুদাইবিয়া প্রান্তরে বাইয়্যাতে রিযওয়ানের সময়ে উসমান(রা)এর সম্ভ্রান্ত মর্যাদার কারণে তিনি মক্কায় প্রেরিত হন,সেটা রাসূল(ﷺ) এর নির্দেশেই, সুতরাং তিনি হুসাইবিয়াতে অনুপস্থিত থাকবেন তাই স্বাভাবিক। আর সাহাবীরা যে বাইয়্যাত নিয়েছেন,যে বাইয়্যাতকারীদের আল্লাহ্‌ তায়ালা কুরআনে জান্নাতী ঘোষনা দিয়েছেন, সেই বাইয়্যাতের কারণও ছিল- উসমান(রা)কে শহীদ করা হয়েছে ভেবে তাঁর জানের বদলার জন্য। বরং এখানে আরো মর্যাদার বিষয় যে, স্বয়ং রাসূল(ﷺ) নিজের হাত মুবারককে উসমান(রা)এর হয়ে বাইয়্যাত করেছিলেন!
আল্লাহ্‌ তায়ালা সাহাবীদের ত্রুটি অনুসন্ধানকারী ও বিদ্বেষ পোষণকারীদের মুখ কালিমাযুক্ত করুন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন