মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০১৬

মধু-মিলন

বইঃ আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য, অধ্যায়ঃ বিবাহ ও দাম্পত্য বিষয়াবলী, অনুচ্ছেদঃ মধু-মিলন

হৃদয়ের আদান-প্রদানের এই প্রথম সাক্ষাতে যৌন-মিলন করতে চেষ্টা না করাই  স্বামীর উচিৎ। অবশ্য স্ত্রী রাজী ও প্রস্ত্তত থাকলে সে কথা ভিন্ন। স্ত্রীর কর্তব্য  স্বামীর ইঙ্গিতে সাড়া দেওয়া। এমন কি গোসলের পানি না থাকলেও স্ত্রীর ‘না’ করার অধিকার নেই।[1]

যেহেতু  স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানার দিকে ডাকে, তখন স্ত্রী যেতে অস্বীকার করলে এবং  স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটালে প্রভাতকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ স্ত্রীর উপর অভিশাপ করে থাকেন।[2]

স্ত্রী রান্নাশালে রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও (অথবা সফরের জন্য সওয়ারীর পিঠে থাকলেও)  স্বামীর ডাকে উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব।[3]

এই মিলনে রয়েছে সদকার সম-পরিমাণ সওয়াব।[4]

একটানা নফল ইবাদত ত্যাগ করেও স্ত্রী-মিলন করা ইসলামের বিধান।[5]

এই জন্যই  স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রী নফল রোযা রাখতে পারে না।[6]

সুতরাং অন্যান্য ব্যস্ততা ত্যাগ করে সঙ্গমের মাধ্যমে উভয়ের মনে মহাশান্তি আনয়ন একান্ত কর্তব্য।

মিলনে কেবল  স্বামীর নিজের যৌনতৃষ্ণা নিবারণই যেন উদ্দেশ্য না হয়। কেবল নিজের উত্তেজনা ও কামাগ্নি নির্বাপিত করতে এবং স্ত্রীর মানসিক, শারীরিক, প্রভৃতি অবস্থা খেয়াল না করে অথবা তাকে উত্তেজিতা না করে অথবা তার বীর্যস্খলন বা পূর্ণতৃপ্তির কথা না ভেবে কেবল নিজের বীর্যপাত ও তৃপ্তিকেই প্রাধান্য দিয়ে মিলন মধু-মিলন নয়। উভয়ের পূর্ণ তৃপ্তিই হল প্রকৃত মধুর মিলন। সুতরাং সঙ্গমের পূর্বে বিভিন্ন শৃঙ্গার; আলিঙ্গন, চুম্বন, দংশন, মর্দন প্রভৃতির ভূমিকা জরুরী। নচেৎ স্ত্রী এই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলে তার নিকট প্রেমের কোন স্বাদই থাকবে না। পতি পেয়েও উপপতির চিন্তায় দিনপাত করবে। অতএব সচেতন যুবক যেন এতে ভুল না করে বসে। নচেৎ বিয়ের আসল উদ্দেশ্য (ব্যভিচার উৎখাত) বিফল হয়ে যাবে।[7]

প্রকাশ যে, শৃঙ্গারের সময় স্ত্রীর স্তনবৃন্ত দংশন ও চোষন কোন দোষের নয়।[8]

অবশ্য একে অন্যের লজ্জাস্থান লেহন ও চোষণ অবশ্যই ঘৃণিত আচরণ।

মিলনের জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ বা সময় নেই। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং মনের চাহিদা থাকলে তা করা যায়। অবশ্য অধিক নেশায় স্বাস্থ্য হারানো উচিৎ নয়। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বিনা স্পর্শ ও যৌন চিন্তায় যখন যৌনাঙ্গ স্ফীত হয়ে উঠে ঠিক সেই সময়েই করা উচিৎ। তবে মনে রাখার কথা যে, একে অপরের যৌনক্ষুধা মিটাতে অসমর্থ হলে এবং যৌনবাজারে একজন গরম ও অপরজন ঠান্ডা হলে সংসারে কলহ নেমে আসে।

যেমন সঙ্গমের নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতিও ইসলামে বর্ণিত হয়নি। এই সময় করলে সন্তান নির্বোধ হয়, ঐভাবে করলে সন্তান অন্ধ, বধির বা বিকলাঙ্গ হয় ইত্যাদি কথার স্বীকৃতি ইসলামে নেই।

আল্লাহ পাক বলেন,

﴿نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ﴾

‘‘তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের শষ্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার।[9]

অতএব সমস্ত রকমের আসন বৈধ। সমস্ত বৈধ সময়ে সঙ্গম বৈধ। অমাবস্যা-পূর্ণিমা প্রভৃতি কোন শুভাশুভ দিন বা রাত নয়। এতে সন্তানের কোনও ক্ষতি হয় না।[10]

স্ত্রীর মাসিক হলে সঙ্গম হারাম। কারণ, এই স্রাব অশুচি। পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীর  নিকট সঙ্গমের জন্য যাওয়া নিষিদ্ধ।[11]

মাসিকাবস্থায় সঙ্গম করা এক প্রকার কুফরী।[12]

সহবাস করে ফেললে এক দ্বীনার (সওয়া চার গ্রাম পরিমাণ সোনা অথবা তার মূল্য, না পারলে এর অর্ধ পরিমাণ অর্থ) সদকাহ করে কাফ্ফারা দিতে হবে।[13]

এ ছাড়া এই অবস্থায় সঙ্গমে  স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যগত বিশেষ ক্ষতিও রয়েছে অনেক।[14]

অবশ্য মাসিকাবস্থায় সঙ্গম ছাড়া অন্যান্যভাবে যৌনাচার বৈধ।[15]

যেমন, এই সময় বা অন্যান্য সময় স্ত্রীর ঊরুমৈথুন বৈধ। এতে বীর্যপাত হলেও দোষ নেই।[16]

তবে স্ত্রীর পায়ুপথে (মলদ্বারে) সঙ্গম হারাম। যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে অভিশপ্ত।[17] এমন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকিয়েও দেখবেন না।[18] এমন কাজও এক প্রকার কুফরী।[19] সুতরাং এই সঙ্গমে স্ত্রীর সম্মত না হওয়া ফরয।

উল্লেখ্য যে, নেফাসের অবস্থাতেও সঙ্গম হারাম। গর্ভাবস্থায় যদি ভ্রূণের কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তাহলে খুবই সতর্কতার সাথে বৈধ।[20]

নির্জন কক্ষে কোন পর্দার ভিতরেই মিলন করা লজ্জাশীলতার পরিচয়। অবশ্য  স্বামী-স্ত্রী  উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ নগ্নাবস্থায় দেখতে পারে।[21]

এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই। ‘ স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা হযরত আয়েশা (রাঃ) কখনও  স্বামীর গুপ্তাঙ্গ দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হয়। সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয়’ ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়।[22]

পক্ষান্তরে আল্লাহ বলেন,

﴿هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ﴾

‘‘ওরা (স্ত্রীরা) তোমাদের লেবাস এবং তোমরা তাদের লেবাস।’’[23]

ঘুমন্ত হলেও নিজ সন্তান বা অন্য কেউ কক্ষে থাকলে সঙ্গম করা উচিৎ নয়। তবে শিশু একান্ত অবোধ হলে ভিন্ন কথা।

প্রকাশ যে, মেয়েদের  যৌন-মিলন  না  করার  সাধারণ ধৈর্য-সীমা চার মাস। তাই পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া এবং উভয়ের সম্মত চুক্তি ব্যতীত এর অধিক সময় বিরহে কাটানো বৈধ নয়।[24]

  সঙ্গমের পূর্বে নিম্নের দুআ পাঠ কর্তব্য;

بِسْمِ اللهِ، اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا.

উচ্চারণঃ- বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইতবা-না অজান্নিবিশ শাইতবা-না মা রাযাকবতানা।

অর্থাৎ, আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদের নিকট থেকে শয়তানকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবে তার নিকট থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।

এই দুআ পাঠ করে সহবাস করলে উক্ত সহবাসের ফলে সৃষ্টি সন্তানের কোন ক্ষতি শয়তান করতে পারে না।[25]

প্রকাশ যে, শয়তানও মানুষের সন্তান-সন্ততিতে অংশগ্রহণ করে থাকে;  যদি সঙ্গমের পূর্বে আল্লাহর নাম না নেওয়া হয় তাহলে।[26]

সঙ্গম বা বীর্যপাতের পর গোসল (মাথা শুদ্ধ সর্বশরীর ধোয়া) ফরয। তবে নগ্নাবস্থায়  স্বামী-স্ত্রী আলিঙ্গনাদি করলে, বীর্যপাত না হলে এবং মযী (বীর্যের পূর্বে নির্গত আঠাল তরল পদার্থ) বের হলেও গোসল ফরয নয়। লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু যথেষ্ট।

লিঙ্গাগ্র যোনী-মুখে প্রবেশ করালে বীর্যপাত না হলেও উভয়ের উপর গোসল ফরয। অনুরূপ লিঙ্গাগ্র যোনীপথে প্রবেশ না করিয়েও যে কোন প্রকারে বীর্যপাত করলে গোসল ফরয।[27]

স্ত্রীর ঊরু-মৈথুন করে বীর্যপাত করলে  স্বামী গোসল করবে। স্ত্রী (বীর্যপাত না হলে) গোসল করবে না। ঊরু ধুয়ে ওযু যথেষ্ট।[28]

একাধিক বার সঙ্গম অথবা গোসল ফরযের একাধিক কারণ হলেও শেষে একবার গোসলই যথেষ্ট।[29]  স্বামী-সঙ্গম করার পর-পরই স্ত্রীর মাসিক শুরু হয়ে গেলে একেবারে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর গোসল করতে পারে।[30] অর্থাৎ মাসিকাবস্থায় পূর্ব-সঙ্গমের জন্য গোসল জরুরী নয়।

প্রথমে  স্বামী গোসল করে স্ত্রীর গোসল করার পূর্বে শীতে তার দেহের উত্তাপ নেওয়া কোন দোষের নয়।[31]

একই রাত্রে বা দিনে একাধিকবার সহবাস করতে চাইলে দুই সহবাসের মাঝে ওযু করে নেওয়া উচিৎ। অবশ্য গোসল করলে আরো উত্তম। এতে পুনর্মিলনে অধিকতর তৃপ্তি লাভ হয়।[32]

নিদ্রার পূর্বে সঙ্গম করে ফজরের পূর্বে গোসল করতে চাইলে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু অথবা তায়াম্মুম করে শয়ন করা উত্তম।[33]

অবশ্য সর্বোত্তম হলো ঘুমাবার পূর্বেই গোসল করে নেওয়া।[34]  কারণ, দীর্ঘক্ষণ নাপাকে না থাকাই শ্রেয়। তবে গোসল না করে যেন কোন নামায নষ্ট না হয়। যেহেতু যথাসময়ে নামায আদায় করা ফরয।

রোযার দিনে স্ত্রীচুম্বন ও শৃঙ্গারাচারে বীর্যপাত না হলে রোযা নষ্ট হয় না।[35] যদিও প্রেমকেলিতে মযী স্খলন হয় তবুও কোন ক্ষতি নেই।[36]

স্ত্রীর  হস্তমৈথুনে বা সমকামে বীর্যপাত করলে রোযা নষ্ট হয়।[37]

স্বামী-স্ত্রী কোন প্রকার ভুলে রোযার দিনে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়লে মনে পড়া মাত্র পৃথক হয়ে যাবে। এর জন্য কাযা কাফ্ফারা নেই।[38]

ইচ্ছাকৃত সঙ্গম করলে তওবা, রোযা কাযা এবং কাফ্ফারা ওয়াজেব; একটি ক্রীতদাস স্বাধীন করবে, না পারলে (যথার্থ ওজর ছাড়া) নিরবচ্ছিন্নভাবে দুই মাস একটানা রোযা পালন করবে, তা না পারলে ষাটজন গরীবকে (মাথাপিছু ১কিলো ২৫০ গ্রাম করে) খাদ্য (চাল) দান করতে হবে।[39]

অবশ্য স্ত্রী সম্মত না হলে জোরপূর্বক সহবাস করলে স্ত্রীর রোযা নষ্ট হয় না।[40]

ই’তিকাফ অবস্থায় সঙ্গম বৈধ নয়।[41]

হজ্জ করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় সঙ্গম করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। হজ্জের সমস্ত কাজ পূর্ণ করতে হবে, মক্কায় অতিরিক্ত একটি উট ফিদয়াহ দিতে হবে এবং নফল হলেও ঐ হজ্জ আগামীতে কাযা করতে হবে।[42]

মিলনের গুপ্ত রহস্য বন্ধু-সখী বা আর কারো নিকট প্রকাশ করা হারাম। স্ত্রী-সঙ্গমের কথা যে অপরের নিকট খুলে বলে সে ব্যক্তি কিয়ামতে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ের লোকেদের দলভুক্ত হবে।[43]

এমন ব্যক্তি তো সেই শয়তানের মত, যে কোন নারী-শয়তানকে রাস্তায় পেয়ে সঙ্গম করতে লাগে, আর লোকেরা তার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে।[44]

উল্লেখ্য যে, বিবাহ-বন্ধনের পর সারার পূর্বে  স্বামী-স্ত্রীর দেখা-সাক্ষাৎ ও মিলন বৈধ।[45]

প্রকাশ থাকে যে, বাসর রাত্রির শেষ প্রভাতে দুধ ইত্যাদি দিয়ে বাসর ঠান্ডা করার আচার ইসলামী নয়।

বরের জন্য বাসর-সকালে উঠে বাড়িতে উপস্থিত আত্মীয়-সবজনকে সালাম দেওয়া এবং তাদের জন্য দুআ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়-সবজনেরও মুস্তাহাব, তার জন্য অনুরূপ সালাম-দুআ করা। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এমনটি করেছেন।[46]

[1] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৯৬পৃঃ) [2] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩২নং) [3] (নাসাঈ, ত্বাহাবী, মুশকিলুল আসার, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৭নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩৪নং) [4] (মুসলিম, নাসাঈ) [5] (বুখারী মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৪৫নং) [6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৬৯নং) [7] (অকাফাত মাআল উসরাহ, সাবরী শাহীন ৫০-৫১পৃঃ) [8] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৫৭) [9] (সূরা বাক্বারা ২/২২৩) [10] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ৯৯-১০০পৃঃ) [11] (আলকুরআন কারীম ২/২২২) [12] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১২০-১২১) [13] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আযি ১২২পৃঃ) [14] (তুহফাতুল আরূস, ১৩৯ পৃঃ) [15] (মুসলিম, আবু দাঊদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২১-১২২পৃঃ) [16] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০) [17] (আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ) [18] (নাসাঈ, তিরমিযী) [19] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ১০১-১০৪পৃঃ) [20] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ) [21] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬) [22] (দেখুন, তুহফাতুল আরূস, ১১৮-১১৯পৃঃ) [23] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭) [24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭৭পৃঃ) [25] (বুখারী, আবু দাঊদ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ৯৮পৃঃ) [26] (সূরা ইসরা (১৭) : ৬৪, তফসীর ইবনে কাসীর ৩/৫৪) [27] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/৮৯) [28] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০পৃঃ) [29] (ঐ ১/১২৫পৃঃ) [30] (ঐ ১/১২৪) [31] (আদাবুয যিফাফ ১০৫ পৃঃ) [32] (মুসলিম, ইবনে আবী শাইবাহ , মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তাবঃ, আদাবুয যিফাফ ১০৮পৃঃ) [33] (আদাবুয যিফাফ ১১৩,১১৭-১১৮ পৃঃ) [34] (ঐ১১৮পৃঃ) [35] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৫) [36] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১০৪) [37] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৭) [38] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১১৩) [39] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৪১৩-৪১৪) [40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫৪২) [41] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭) [42] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ২/২৩২) [43] (ইবনে আবী শাইবাহ , মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪২ পৃঃ) [44] (মুসনাদে আহমদ,ইবনে আবী শাইবাহ ,আবু দাঊদ,বাইহাকী,প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪৩-১৪৪ পৃঃ) [45] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/২০৬) [46] (নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৮-১৩৯ পৃঃ)

সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভ

নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত।

وَهُوَ قَوْلٌ وَفِعْلٌ وَيَزِيدُ وَيَنْقُصُ قَالَ اللهُ تَعَالَى : }لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى{ }وَيَزِيدُ اللهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى{ }وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْوَاهُمْ{ وَقَوْلُهُ }وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا{ وَقَوْلُهُ }أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيمَانًا{ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَقَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ }فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا{ وَقَوْلُهُ تَعَالَى }وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا{ وَالْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ مِنَ الإِيْمَانِ وَكَتَبَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ إِلَى عَدِيِّ بْنِ عَدِيٍّ إِنَّ لِلْإِيمَانِ فَرَائِضَ وَشَرَائِعَ وَحُدُودًا وَسُنَنًا فَمَنْ اسْتَكْمَلَهَا اسْتَكْمَلَ الإِيْمَانَ وَمَنْ لَمْ يَسْتَكْمِلْهَا لَمْ يَسْتَكْمِلْ الإِيْمَانَ فَإِنْ أَعِشْ فَسَأُبَيِّنُهَا لَكُمْ حَتَّى تَعْمَلُوا بِهَا وَإِنْ أَمُتْ فَمَا أَنَا عَلَى صُحْبَتِكُمْ بِحَرِيصٍ وَقَالَ إِبْرَاهِيمُ صلى الله عليه وسلم }وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي{ وَقَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ اجْلِسْ بِنَا نُؤْمِنْ سَاعَةً وَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ الْيَقِينُ الإِيْمَانُ كُلُّهُ وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ لاَ يَبْلُغُ الْعَبْدُ حَقِيقَةَ التَّقْوَى حَتَّى يَدَعَ مَا حَاكَ فِي الصَّدْرِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ }شَرَعَ لَكُمْ{ مِنْ الدِّينِ أَوْصَيْنَاكَ يَا مُحَمَّدُ وَإِيَّاهُ دِينًا وَاحِدًا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ }شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا{ سَبِيلاً وَسُنَّةً

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটিঃ মুখে স্বীকার এবং কাজে পরিণত করাই হচ্ছে ঈমান এবং তা বৃদ্ধি পায় ও হরাস পায়।* আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যাতে তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে ঈমান মজবুত করে নেয়- (সূরাহ্ ফাত্হ ৪৮/৪)। আমরা তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- (সূরাহ্ কাহাফ ১৮/১৩)। এবং যারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাদের অধিক হিদায়াত দান করেন- (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯/৭৬)। এবং যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ্ তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দেন এবং তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দেন- (সূরাহ্ মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)। যাতে মু’মিনদের ঈমান বেড়ে যায়- (সূরাহ্ মুদ্দাস্সির ৭৪/৩১)। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বাড়িয়ে দিল? যারা মু’মিন এ তো তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়- (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ ৯/১২৪)। এবং তাঁর বাণী, ‘‘সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর ; একথা তাদের ঈমানের দৃঢ়তা বাড়িয়ে দিল’’- (সূরাহ্ আলু-ইমরান ৩/১৭৩)। ‘‘আর এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বাড়লো’’- (সূরাহ্ আহ্যাব ৩৩/১৭৩)। ‘‘এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পেল’’- (সূরাহ্ আহ্যাব ৩৩/২২)।

আর আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা ঈমানের অংশ। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহ.) ‘আদী ইবনু ‘আদী (রহ.)-এর নিকট এক পত্রে লিখেছিলেন, ‘ঈমানের কতকগুলো ফার্য, কতকগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করে তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না। আমি যদি বেঁচে থাকি তবে অচিরেই এগুলো তোমাদের নিকট ব্যক্ত করব, যাতে তোমরা তার উপর ‘আমল করতে পার। আর যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের সাহচর্যে থাকার জন্য আমি আকাঙ্ক্ষিত নই।’

ইবরাহীম (‘আ.) বলেন, ‘তবে এ তো কেবল চিত্ত প্রশান্তির জন্য’- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/২৬)। মু‘আয (রাঃ) বলেন, ‘‘এসো আমাদের সঙ্গে বস, কিছুক্ষণ ঈমানের আলোচনা করি।’’ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াকীন হল পূর্ণ ঈমান।’ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে।’ মুজাহিদ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি আপনাকে এবং নূহকে একই ধর্মের আদেশ করেছি’’- (সূরাহ্ শূরা ৪২/১৩)। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, ‘‘অর্থাৎ পথ ও পন্থা’’- (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ ৫/৪৮)।

}قُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّي لَوْلاَ دُعَاؤُكُمْ{ وَمَعْنَى الدُّعَاءِ فِي اللُّغَةِ الإِيْمَانُ.

এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘বলে দিন, আমার প্রতিপালক তোমাদের একটুও পরোয়া করবেন না যদি তোমরা ‘ইবাদাত না কর’’- (সূরাহ্ আল-ফুরক্বান ২৫/৭৭)। অভিধানে দু‘আর অর্থ করা হয়েছেঃ ‘‘ঈমান’’।

৮. ইবন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। (৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৭)

* কোন কোন ফকীহদের নিকট ঈমান বাড়েও না কমেও না। বরং সমান থাকে। তাদের নিকট একজন নবীর ঈমান ও ইবলিসের ঈমান এক সমান। তাদের এই ‘আকীদাহ কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী। এটা মুরজি’আহ সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত ‘আকীদাহর অন্তর্ভুক্ত। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৬