বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

স্ত্রীর উপর স্বামীর অনস্বীকার্য অধিকার

স্ত্রীর উপর স্বামীর অনস্বীকার্য অধিকার

স্ত্রীর উপর স্বামীরও অনস্বীকার্য অধিকার রয়েছেঃ-

প্রথম অধিকার হল বৈধ কর্মে ও আদেশে স্বামীর আনুগত্য। স্বামী সংসারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সংসার ও দাম্পত্য বিষয়ে তার আনুগত্য স্ত্রীর জন্য জরুরী। যেমন কোন স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক, অফিসের ম্যানেজার বা ডিরেক্টর প্রভৃতির আনুগত্য অন্যান্য সকলকে করতে হয়।
স্ত্রী সাধারণতঃ স্বামীর চেয়ে বয়সে ছোট হয়। মাতৃলয়ে মা-বাপের (বৈধ বিষয়ে) আদেশ যেমন মেনে চলতে ছেলে-মেয়ে বাধ্য, তেমনি শবশুরালয়ে স্বামীর আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলাও স্ত্রীর প্রকৃতিগত আচরণ। তাছাড়া ধর্মেও রয়েছে স্বামীর জন্য অতিরিক্ত মর্যাদা। অতএব প্রেম, সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলতা বজায় রাখতে বড়কে নেতা মানতেই হয়। প্রত্যেক কোম্পানী ও উদ্যোগে পার্থিব এই নিয়মই অনুসরণীয়। অতএব স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে তা নারী-পরাধীনতা হবে কেন। তবে অন্যায় ও অবৈধ বিষয়ে অবশ্যই স্বামীর আনুগত্য অবৈধ। কারণ যাদেরকে আল্লাহ কর্তৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে অবৈধ ও অন্যায় কর্তৃত্ব দেননি। কেউই তার কর্তৃত্ব ও পদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে পারে না। তাছাড়া কর্তা হওয়ার অর্থ কেবলমাত্র শাসন চালানোই নয়; বরং দায়িত্বশীলতার বোঝা সুষ্ঠুভাবে বহন করাও কর্তার মহান কর্তব্য।
যে নারী স্বামীর একান্ত অনুগতা ও পতিব্রতা সে নারীর বড় মর্যাদা রয়েছে ইসলামে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا، دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ.
‘‘রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।[1]
خَيْرُ النِّساءِ الَّتِي تَسُرُّهُ إذا نَظَرَ وَتُطِيعُهُ إذا أمَرَ ولا تُخالِفُهُ في نَفْسِها ولا مالِها بِما يَكْرَهُ.
‘‘শ্রেষ্ঠ রমণী সেই, যার প্রতি তার স্বামী দৃকপাত করলে সে তাকে খোশ করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং তার জীবন ও সম্পদে স্বামীর অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচরণ করে না।’’[2]
স্ত্রীর নিকট স্বামীর মর্যাদা বিরাট। এই মর্যাদার কথা ইসলাম নিজে ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
‘‘স্ত্রীর জন্য স্বামী তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’’[3]
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا.
‘‘যদি আমি কাউকে কারো জন্য সিজদা করতে আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার  স্বামীকে সিজদা করে।’’[4]
مِن حَقِّ الزَّوجِ عَلَى زَوجَتِهِ إن سَالَ دَماً وَقَيحاً وَصَديداً فَلَحَسَتهُ بِلِسَانِهَا مَا أَدَّتْ حَقَّهُ.
‘‘স্ত্রীর কাছে স্বামীর এমন অধিকার আছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীর দেহের ঘা চেঁটেও থাকে তবুও সে তার যথার্থ হক আদায় করতে পারবে না।’’[5]
...فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَوْ تَعْلَمُ مَا حَقُّ زَوْجِهَا ، لَمْ تَزَلْ قَائِمَةً مَا حَضَرَ غَدَاؤُهُ وَعَشَاؤُهُ.
‘‘মহিলা যদি নিজ স্বামীর হক (যথার্থরূপে) জানতো, তাহলে তার দুপুর অথবা রাতের খাবার খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত সে (তার পাশে) দাঁড়িয়ে থাকতো।’’[6]
...فَوَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا كُلِّهِ حَتَّى إِنْ لَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ أَعْطَتْهُ أَوْ قَالَ لَمْ تَمْنَعْهُ.
‘‘তাঁর শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! নারী তার প্রতিপালকের হক ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার স্বামীর হক আদায় করেছে। সওয়ারীর পিঠে থাকলেও যদি স্বামী তার মিলন চায় তবে সে বাধা দিতে পারবে না।’’[7]
اثْنَانِ لا تُجَاوِزُ صَلاتُهُمَا رُءُوسَهُمَا : عَبْدٌ آبِقٌ مِنْ مَوَالِيهِ حَتَّى يَرْجِعَ إِلَيْهِمْ ، وَامْرَأَةٌ عَصَتْ زَوْجَهَا حَتَّى تَرْجِعَ.
‘‘দুই ব্যক্তির নামায তাদের মাথা অতিক্রম করে না (কবুল হয় না) ; সেই ক্রীতদাস যে তার প্রভুর নিকট থেকে পলায়ন করেছে, সে তার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করেছে, সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত (নামায কবুল হয় না।)’’[8]
ثَلاَثَةٌ لاَ يُقبَلُ منهُم صَلاَةٌ وَلاَ تَصعُدُ إلَى السَّمَاءِ وَلاَ تَجَاوزُ رُءُوسُهُم : رَجُلٌ أَمَّ قَوماً وَهُم لَه كَارِهُونَ ، وَرَجُلٌ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ وَلَمْ يُؤمَر ، وَامرَأَةُ دَعَاهَا زَوجُهَا من اللَّيلِ فَأَبَتْ عَلَيه.
‘‘তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয় না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ) লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়।[9]
إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيءَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ.
‘‘ স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ অন্য এক বর্ণনায় ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’[10]
স্বামীর আনুগত্য স্ত্রীর জন্য আল্লাহ ও তদীয় রসূলের আনুগত্য। সুতরাং  স্বামীকে সন্তুষ্ট করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। বলাই বাহুল্য যে, অধিকাংশ তালাক ও দ্বিতীয় বিবাহের কারণ হল স্বামীর আহ্বানে স্ত্রীর যথাসময়ে সাড়া না দেওয়া। উক্ত অধিকার পালনেই  স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন মজবুত ও মধুর হয়ে গড়ে উঠে, নচেৎ না।
২-  স্বামীর মান-মর্যাদা ও চাহিদার খেয়াল রাখা স্ত্রীর জন্য জরুরী। স্বামী বাইরে থেকে এসে যেন অপ্রীতিকর কিছু দেখতে, শুনতে, শুঁকতে বা অনুভব করতে না পারে। পুরুষ বাইরে কর্মব্যস্ততায় জবলে-পুড়ে বাড়িতে এসে যদি স্ত্রীর স্মিতমুখ ও দেহ-সংসারের পারিপাট্য না পেল, তাহলে তার আর সুখ কোথায়? সংসারে তার মত দুর্ভাগা ব্যক্তি আর কেউ নেই, যাকে বাইরে মেহনতে জবলে এসে বাড়িতে স্ত্রীর তাপেও জবলতে হয়।
সে নারী কত আদর্শ পতিভক্ত, যে তার  স্বামীকে মিলন দিয়ে খুশী ও সন্তুষ্ট করার জন্য কারো মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করে না। অতি ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে এমনটি করা অনুপম পতিভক্তির পরিচয়। পরন্তু এরূপ করার পশ্চাতে প্রভূত কল্যাণের আশা করা যায়। যেমন ঘটেছিল উম্মে সুলাইম রুমাইসা (বিবি রমিসা) ও তাঁর  স্বামী আবু তালহা (রাঃ) এর সাংসারিক জীবনে। তাঁদের একমাত্র সন্তান ব্যাধিগ্রস্ত ছিল। আবু তালহা প্রায় সময় নবী (সাঃ) এর নিকট কাটাতেন। এক দিন সন্ধ্যায় তিনি তাঁর নিকট গেলেন। এদিকে বাড়িতে তাঁর ছেলে মারা গেল। উম্মে সুলাইম সকলকে নিষেধ করলেন, যাতে আবু তালহার নিকট খবর না যায়। তিনি ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে ঢেকে রেখে দিলেন। অতঃপর  স্বামী আবু তালহা রসূল (সাঃ) এর নিকট থেকে বাড়ি ফিরলে বললেন, ‘আমার বেটা কেমন আছে?’ রুমাইসা বললেন, ‘যখন থেকে ও পীড়িত তখন থেকে যে কষ্ট পাচ্ছিল তার চেয়ে এখন খুব শান্ত। আর আশা করি সে আরাম লাভ করেছে!’
অতঃপর পতিপ্রাণা স্ত্রী  স্বামী এবং তাঁর সাথে আসা আরো অন্যান্য মেহমানদের জন্য রাত্রের খাবার পেশ করলেন। সকলে খেয়ে উঠে গেল। আবু তালহা উঠে নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। (স্ত্রীর কথায় ভাবলেন, ছেলে আরাম পেয়ে ঘুমাচ্ছে।) ওদিকে পতিব্রতা রুমাইসা সব কাজ সেরে উত্তমরূপে সাজ-সজ্জা করলেন, সুগন্ধি মাখলেন। অতঃপর  স্বামীর বিছানায় এলেন।  স্বামী স্ত্রীর নিকট থেকে সৌন্দর্য, সৌরভ এবং নির্জনতা পেলে উভয়ের মধ্যে যা ঘটে তা তাদের  স্বামী-স্ত্রীর মাঝে (মিলন) ঘটল। তারপর রাত্রির শেষ দিকে রুমাইসা  স্বামীকে বললেন, ‘হে আবু তালহা! যদি কেউ কাউকে কোন জিনিস ধার স্বরূপ ব্যবহার করতে দেয়, অতঃপর সেই জিনিসের মালিক যদি তা ফেরৎ নেয় তবে ব্যবহারকারীর কি বাধা দেওয়া বা কিছু বলার থাকতে পারে?’ আবু তালহা বললেন, ‘অবশ্যই না।’ স্ত্রী বললেন, ‘তাহলে শুনুন, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল আপনাকে যে ছেলে ধার দিয়েছিলেন তা ফেরৎ নিয়েছেন। অতএব আপনি ধৈর্য ধরে নেকীর আশা করুন!’
এ কথায় স্বামী রেগে উঠলেন; বললেন, ‘এতক্ষণ পর্যন্ত কিছু না বলে চুপ থেকে, এত কিছু হওয়ার পর তুমি আমাকে আমার ছেলে মরার খবর দিচ্ছ?!’ অতঃপর তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি----’ পড়লেন ও আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর নিকট ঘটনা খুলে বললে তিনি তাঁকে বললেন, ‘‘তোমাদের উভয়ের ঐ গত রাত্রে আল্লাহ বর্কত দান করুন।’’ সুতরাং ঐ রাত্রেই রুমাইসা তাঁর গর্ভে আবার একটি সন্তান ধারণ করেন।[11]
৩-  স্বামীর দ্বীন ও ইজ্জতের খেয়াল করা ওয়াজেব। বেপর্দা, টোঁ-টোঁ কোম্পানী হয়ে, পাড়াকুঁদুলী হয়ে, দরজা, জানালা বা ছাদ হতে উঁকি ঝুঁকি মেরে,  স্বামীর অবর্তমানে কোন বেগানার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে অথবা কোথাও গেয়ে-এসে নিজের তথা  স্বামীর বদনাম করা এবং আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা মোটেই বৈধ নয়। স্বামী-গৃহে হিফাযতের সাথে থেকে তার মন মতো চলা এক আমানত। এই আমানতের খেয়ানত  স্বামীর অবর্তমানে করলে নিশ্চয়ই সে সাধবী নারী নয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ﴾
‘‘সুতরাং সাধবী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজেদের ইজ্জত রক্ষাকারিণী। আল্লাহর হিফাযতে তারা তা হিফাযত করে।’’[12]
স্বামীর নিকট স্বামীর ভয়ে বা তাকে প্রদর্শন করে পর্দাবিবি বা হিফাযতকারিণী সেজে তার অবর্তমানে গোপনে আল্লাহকে ভয় না ক’রে কুটুমবাড়ি, বিয়েবাড়ি প্রভৃতি গিয়ে অথবা শ্বশুরবাড়িতে পর্দানশীন সেজে এবং বাপের বাড়িতে বেপর্দা হয়ে নিজের মন ও খেয়াল-খুশীর তাবেদারী ক’রে থাকলে সে নারী নিশ্চয় বড় ধোঁকাবাজ। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
ثَلَاثَةٌ لَا تَسْأَلْ عَنْهُمْ رَجُلٌ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ وَعَصَى إِمَامَهُ وَمَاتَ عَاصِيًا وَأَمَةٌ أَوْ عَبْدٌ أَبَقَ فَمَاتَ وَامْرَأَةٌ غَابَ عَنْهَا زَوْجُهَا قَدْ كَفَاهَا مُؤْنَةَ الدُّنْيَا فَتَبَرَّجَتْ بَعْدَهُ فَلَا تَسْأَلْ عَنْهُمْ.
‘‘তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কোন প্রশ্নই করো না; যে জামাআত ত্যাগ করে ইমামের অবাধ্য হয়ে মারা যায়, যে ক্রীতদাস বা দাসী প্রভু থেকে পলায়ন করে মারা যায়, এবং সেই নারী যার স্বামী অনুপস্থিত থাকলে---তার সাংসারিক সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস বন্দোবস্ত করে দেওয়া সত্ত্বেও---তার অনুপস্থিতিতে বেপর্দায় বাইরে যায়।’’[13]
শ্রেষ্ঠা রমণী তো সেই যে কোন পরপুরুষকে নিজের মুখ দেখায় না এবং বেগানার মুখ নিজেও দেখে না।  স্বামী বাড়িতে না থাকলে গান-বাজনা শুনে নয়; বরং কুরআন ও দ্বীনী বই-পুস্তক পড়ে নিজের মনকে ফ্রী করে। কারণ গান শুনে মন আরো খারাপ হয়।  স্বামীকে কাছে পেতে ইচ্ছা হয়। যৌন ক্ষুধা বেড়ে উঠে। তাইতো সলফগণ বলেন, ‘গান হল ব্যভিচারের মন্ত্র।’[14]
পক্ষান্তরে-
﴿الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللهِ﴾
‘‘আল্লাহর যিকরেই মুমিনদের চিত্ত প্রশান্ত হয়।’’[15]
৪-  স্বামীর বৈয়াক্তিক ও সামাজিক জীবনের প্রতিও বিশেষ খেয়াল রাখা স্ত্রীর কর্তব্য। সুতরাং তার ব্যক্তিগত কাজ-কারবার, পড়াশুনা প্রভৃতিতে ডিস্টার্ব করা বা বাধা দেওয়া হিতাকাঙিক্ষনী স্ত্রীর অভ্যাস হতে পারে না।  স্বামীর নিকট এমন বিষয়, বস্ত্ত বা বিলাস-সামগ্রী স্ত্রী চাইবে না, যার ফলে সে বাধ্য হয়ে অবৈধ অর্থোপার্জনের পথ অবলম্বন করে ফেলে। হারাম উপার্জন ও অসৎ ব্যবসায় মোটেই তার সহায়তা করবে না। সাধবী স্ত্রী তো সেই; যে তার  স্বামীকে ব্যবসায় বের হলে এই বলে সলফের স্ত্রীর মত অসিয়ত করে, ‘‘আল্লাহকে ভয় করবেন, হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকবেন। কারণ, আমরা না খেয়ে ক্ষুধায় ধৈর্য ধরতে পারব; কিন্তু জাহান্নামে ধৈর্য ধরতে পারব না!’’[16]
‘‘--পতি যদি হয় অন্ধ হে সতী বেঁধোনা নয়নে আবরণ,
 অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন তোমার সত্য আচরণ।’’
৫-  স্বামীর ঘর সংসার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখা স্ত্রীর কর্তব্য।  স্বামীর যাবতীয় খিদমত করা, ছেলে-মেয়েদেরকে পরিষ্কার ও সভ্য করে রাখাও তার দায়িত্ব। সর্বকাজ নিজের হাতে করাই উত্তম। এতে তার স্বাস্থ্য ভালো এবং দেহে স্ফূর্তি থাকবে। একান্ত চাপ ও প্রয়োজন না হলে দাসী ব্যবহার আলসে মেয়ের কাজ। সাহাবী মহিলাগণ সবহস্তে ক্ষেতেরও কাজ করতেন। একদা হযরত ফাতেমা (রাঃ) কাজের চাপের এবং নিজের মেহনত ও কষ্টের কথা আব্বার নিকট উল্লেখ ক’রে কোন খাদেম চাইলে প্রিয় নবী (সাঃ) তাঁকে সবহস্তে কর্ম সম্পাদন করতে নির্দেশ দিলেন এবং অলসতা কাটিয়ে উঠার ঔষধও বলে  দিলেন; বললেন, ‘‘যখন তোমরা শয়ন করবে তখন ৩৪ বার ‘আল্লা-হু আকবার’ ৩৩ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’ এবং ৩৩ বার ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদেম থেকেও উত্তম হবে!’’[17]
তাই তো একজন বাদশাহর কন্যা হয়েও তিনি সবহস্তে চাকি ঘুরিয়ে আটা পিষতেন। তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত, তবুও আব্বার কথামত কোন দাস-দাসী ব্যবহার না করেই সংসার করেছেন।
‘‘আত্মাহারা না হইয়া সৌভাগ্য সোহাগে
পরন্তু যে করে কাম সবকরে যতনে,
পরিজন প্রীতি হেতু প্রেম অনুরাগে
 আদর্শ রমণী সেই যথার্থ ভূবনে।’’
পক্ষান্তরে দাস-দাসী ব্যবহারে বিপত্তি আছে। এদের মাধ্যমে ঘরের রহস্য বাইরে যায়, বাড়ির কোন সদস্যের সাথে অবৈধ প্রণয় গড়ে উঠতে পারে। তাদের ব্যবহার, চরিত্র, বিশ্বাস প্রভৃতি শিশুদের মনে প্রভাব বিস্তার করে ইত্যাদি। বিলাসের আতিশয্যে নিজের  স্বামী ও সন্তানের সেবাযতন ত্যাগ করে সব কিছু দাস-দাসীর উপর নির্ভর করলে সংসারে ইচ্ছাসুখ মিলে না।
‘‘বিলাসিনী যে রমণী গৃহস্থালি কার্য
 সম্পাদন আপন ভাবিয়া না করে,
 হউক তাহার পতি রাজ-অধিরাজ
অধমা সে নারী এ সংসার ভিতরে।’’
৬-  স্বামী তার স্ত্রীকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে থাকে। যথাসাধ্য উত্তম আহার-বসনের ব্যবস্থা করে থাকে। তবুও ত্রুটি স্বাভাবিক। কিন্তু সামান্য ত্রুটি দেখে সমস্ত উপকার, উপহার ও প্রীতি-ভালোবাসাকে ভুলে যাওয়া নারীর সহজাত প্রকৃতি। কিছু শিক্ষা বা শাসনের কথা বললে মনে করে,  স্বামী তাকে কোনদিন ভালোবাসে না।  স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার মনে নিদারুণ ব্যথা দিয়ে থাকে। এটি এমন একটি কর্ম যার জন্যও মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে অধিক সংখ্যায় জাহান্নামবাসিনী হবে।[18]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
لاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى امْرَأَةٍ لاَ تَشْكُرُ لِزَوْجِهَا وَهِىَ لاَ تَسْتَغْنِى عَنْهُ.
‘‘আল্লাহ সেই রমণীর দিকে তাকিয়েও দেখেন না (দেখবেন না) যে তার স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না, অথচ সে  স্বামীর মুখাপেক্ষিনী।[19]
আসলেই ‘মেয়ে লোকের এমনি সবভাব, হাজার দিলেও যায় না অভাব।’ সে দেখে না যে, তার  স্বামী তার জন্য কত কি করছে। সে শুধু তাই দেখে, যা তার জন্য করা হয় না।
৭- স্ত্রী হয় সংসারের রানী। স্বামীর ধন-সম্পদ সর্বসংসার হয় তার রাজত্ব এবং  স্বামীর আমানতও। তাই তার যথার্থ হিফাযত করা এবং যথাস্থানে সঠিকভাবে তা ব্যয় করা স্ত্রীর কর্তব্য। অন্যায়ভাবে গোপনে ব্যয় করা, তার বিনা অনুমতিতে দান করা বা আত্মীয়-সবজনকে উপঢৌকন দেওয়া আমানতের খেয়ানত। এমন স্ত্রী পুণ্যময়ী নয়; বরং খেয়ানত-কারিণী। অবশ্য  স্বামী ব্যয়কুণ্ঠ কৃপণ হলে এবং স্ত্রী ও সন্তানের জন্য যথার্থ খরচাদি না দিলে, স্ত্রী গোপনে শুধু ততটুকুই নিতে পারবে যতটুকু নিলে তার ও তার সন্তানের প্রয়োজন মিটানোর জন্য যথেষ্ট হবে। এর বেশী নিলে অবৈধ মাল নেওয়া হবে।[20]
অবশ্য স্বামী দানশীল হলে এবং দানের জন্য সাধারণ অনুমতি থাকলে স্ত্রী যদি তার অনুপস্থিতিতে দান করে, তাহলে উভয়েই সমান সওয়াবের অধিকারী হবে।[21]
৮-  স্বামীর বিনা অনুমতিতে বাইরে, মার্কেট, বিয়েবাড়ি, মড়াবাড়ি ইত্যাদি না যাওয়া পতিভক্তির পরিচয়। এমনকি মসজিদে (ইমামের পশ্চাতে মহিলা জামাআতে) নামায পড়তে গেলেও  স্বামীর অনুমতি চাই।[22] 
এই পরাধীনতায় আছে মুক্তির পরম স্বাদ। মাতৃক্রোড় উপেক্ষা করে ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষেম যেমন শিশু নিজেকে বিপদে ফেলে, তা-এর কোল ছেড়ে ডিম যেমন ঘোলা হয়ে যায়, ঠিক তেমনি নারীও  স্বামীর এই স্নেহ-সীমাকে উল্লংঘন করে নিজের দ্বীন ও দুনিয়া নষ্ট করে।
রুচিতে যা রুচে তাই যদি খাওয়া পরা, বলা, চলা হয় এবং রুচিতে যা বাধে তাই যদি না খাওয়া, না পরা, না বলা, না চলা হয়, তাহলে নৈতিকতাই বা কি? মানবিকতাই বা কি? তাও মানুষের রুচির ব্যাপার নয় কি? তাহলে থাকল আর কি? বন্ধন, শৃঙ্খল ও সীমাবদ্ধতা ছাড়া কি কোন নৈতিকতা, কোন শান্তি ও সুখ আছে?
পক্ষান্তরে ইসলামী নৈতিকতা ও গন্ডী-সীমার ভিতরে থেকেও নারী কর্ম, চাকুরী ও উপার্জন করতে পারে। যেখানে দ্বীনের কোন বাধা নেই, নারীত্ব ও সতীত্বের কোন আঁচড় নেই, সেখানে  স্বামীরও কোন বাধা থাকতে পারে না। মহিলা কেবল মহিলা কর্মক্ষেত্রে, শিশু ও মহিলা শিক্ষাঙ্গনে অফিস বা শিক্ষকতার কাজ, বাড়িতে বসে শিশু ও মহিলা পোষাকের দর্জিকাজ অথবা কোন হাতের শিল্পকাজ বা ম্যাকানিকেল কাজ দিব্যি করতে পারে; যাতে পরপুরুষের সাথে কোন সংস্রবই নেই। অন্যথা পর পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে অবাধভাবে মিলেমিশে কর্ম করা নারী স্বাধীনতা নয়, বরং নারীর হীনতা এবং  স্বামীর দ্বীনতা।[23]
অবশ্য যারা স্বামীর পরম সুখ ও ভালোবাসা পেয়ে ধন্য হয়েছে তারা কোন দিন ঐ সকল চাকুরী মরীচিকার পশ্চাতে ছুটে না। যেখানে জলভ্রম প্রদর্শন করে নারীকে পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে আকর্ষণ করে এনে তারা নারীকেই জলখাবার বানিয়ে থাকে। ঘরের ও বাইরের উভয় কাজ উভয়কেই করতে হলে সুখ কোথায়? এই অবস্থায় সন্তান-সন্ততির লালন পালন ও তরবিয়ত কোত্থেকে কেমন করে হবে?
বলাই বাহুল্য যে, ধর্ম ও নৈতিকতাকে কবর দিয়ে উচ্চ শিক্ষিতা হয়ে, প্রতিষ্ঠিতা হয়ে, চাকুরী করে মোটা টাকা উপার্জন করে, স্বামীর তোয়াক্কা না করে, পার্থিব সুখ লুটা ভোগবাদী, বস্ত্তবাদী এবং পরকালে অবিশ্বাসিনীদের লক্ষ্য। পক্ষান্তরে ধর্ম ও নীতি-নৈতিকতা বজায় রেখে পার্থিব বিষয়াদি পরকালে বিশ্বাসিনী মুসলিম নারীর উপলক্ষ্য মাত্র। মুসলমানের মূল লক্ষ্য হল পরকাল। মুসলিম দু’দিনের সুখস্বপ্নে সন্তুষ্ট নয়। সে চায় চিরস্থায়ী উপভোগ্য অনন্ত সুখ।
এ জন্যই প্রিয় নবী (সাঃ) দুআ করতেন,
(وَلاَ تَجْعَل الدُّنْيَا  أَكْبَرَ هَمِّنَا وَلاَ مَبْلَغَ عِلْمِنَا)
অর্থাৎ, দুনিয়াকে আমাদের বৃহত্তম চিন্তার বিষয় এবং আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমা (মূল লক্ষ্য) করে দিও না।[24]
৯-  স্বামীর অনুমতি না হলে তার উপস্থিতিতে স্ত্রী নফল রোযা রাখতে পারে না। যেহেতু তার সাংসারিক কর্মে বা যৌন-সুখে বাধা পড়লে আল্লাহ সে রোযায় রাযী নন।[25]
১০- কোন বিষয়ে স্বামী রাগান্বিত হলে স্ত্রী বিনীতা হয়ে নীরব থাকবে। নচেৎ ইঁটের বদলে পাটকেল ছুঁড়লে আগুনে পেট্রল পড়বে। যে সোহাগ করে, তার শাসন করার অধিকার আছে। আর এ শাসন স্ত্রী ঘাড় পেতে মেনে নিতে বাধ্য হবে। ভুল হলে ক্ষমা চাইবে। যেহেতু স্বামী বয়সে ও মর্যাদায় বড়। ক্ষমা প্রার্থনায় অপমান নয়; বরং মানুষের মান বর্ধমান হয়; ইহকালে এবং পরকালেও। তাছাড়া অহংকার ও ঔদ্ধত্যের সাথে ‘বেশ করেছি, অত পারি না’ ইত্যাদি বলে অনমনীয়তা প্রকাশ সতী নারীর ধর্ম নয়। সুতরাং  স্বামীর রাগের আগুনকে অহংকার ও ঔদ্ধত্যের পেট্রল দ্বারা নয় বরং বিনয়ের পানি দ্বারা নির্বাপিত করা উচিৎ।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
وَنسَاؤُكُم من أَهْل الجَنَّة الوَدُود العَؤودُ عَلَى زَوجهَا الَّتي إذَا غَضِبَ جَاءت حَتَّى تَضَعَ يَدَهَا في يَده ثُمَّ تَقُولُ : لاَ أَذُوقُ غَمضاً حَتى تَرضَى.
‘‘তোমাদের স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে; যে স্ত্রী অধিক প্রণয়িণী, সন্তানদাত্রী, বার-বার ভুল করে বার-বার স্বামীর নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, যার স্বামী রাগ করলে সে তার নিকট এসে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি রাজি (ঠান্ডা) না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাবই না।’’[26]
নারী হয়ে একজন পুরুষের মন জয় করতে না পারা বড় আশ্চর্যের ব্যাপার!
‘‘তুফানে হাল ধরতে নারে সেইবা কেমন নেয়ে,
আর মরদের মন যোগাতে নারে সেই বা কেমন মেয়ে?!’’
খেয়াল রাখার বিষয় যে, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে শয়তান বড় তৎপর। সমুদ্রের উপর নিজ সিংহাসন পেতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তার ‘স্পেশাল ফোর্স’ পাঠিয়ে দেয়। সবচেয়ে যে বড় ফিৎনা সৃষ্টি করতে পারে সেই হয় তার অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত। কে কি করেছে তার হিসাব নেয় ইবলীস। প্রত্যেকে এসে বলে, ‘আমি অমুক করেছি, আমি অমুক করেছি। (চুরি, ব্যভিচার, হত্যা প্রভৃতি সংঘটন করেছি)। কিন্তু ইবলীস বলে, ‘কিছুই করনি তুমি!’ অতঃপর যখন একজন বলে ‘আমি  স্বামী-স্ত্রীর মাঝে রাগারাগি সৃষ্টি করে উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ছেড়েছি’ তখন শয়তান উঠে এসে তাকে আলিঙ্গন করে বলে, ‘হ্যাঁ, তুমিই কাজের ব্যাটা কাজ করেছ![27] 
সুতরাং রাগের সময় শয়তানকে সহায়তা ও খোশ করা অবশ্যই কোন মুসলিম দম্পতির কাজ নয়।
১১- পতিপ্রাণা নারীর সদা চিন্তা  স্বামীর মনোসুখ, তার পরম আনন্দ ও খুশী। যেহেতু তার আনন্দেই স্ত্রীর পরমানন্দ।  স্বামীর আনন্দ না হলে নিজের আনন্দ কল্পনাই করতে পারে না স্ত্রী। বাইরে থেকে রোদে-গরমে এলে সবতঃস্ফূর্তভাবে তার সামনে পানি পেশ করা, হাওয়া করে দেওয়া ইত্যাদি সতীর ধর্ম। তাছাড়া  স্বামী সালাম দিয়ে যখন বাড়ি প্রবেশ করে, তখন উত্তর দিয়ে হাসিমাখা ওষ্ঠাধরের স্পর্শ উপহার যদি উভয়ে বিনিময় করে, তবে এর মত দাম্পত্য সুখ আর আছে কোথায়?
‘‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
 রমণী সুন্দর হয় সতীত্ব রক্ষণে।’’
এমনিতেই স্ত্রী স্বামীর জন্য হয়ে থাকবে ফুটন্ত গোলাপ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়, অঙ্গসজ্জা এবং বেশভূষায়  স্বামীর চক্ষুশীতল করবে। সৌন্দর্য ও সৌরভে ভরা গোলাপের দিকে একবার তাকিয়ে যেমন মন-প্রাণ আকৃষ্যমাণ হয়, ঠিক তেমনি হবে  স্বামীর মন তার স্ত্রীকে দেখে।  স্বামী-স্ত্রীর এ পরম সুখ থাকলে, কোন নারী সংগঠন বা নারী-সবাধীনতা ও নারী-মুক্তির আন্দোলনের প্রয়োজনই নেই।
নারী-পুরুষের মধুর সহাবস্থান ও মধুর মিলনে পরম সুখ, এই শান্তিই পরম শান্তি। কিন্তু এমন স্বর্গীয় সংসার আছে কয়টা?
‘‘কোথায় গেলে তারে পাই?
যার লাগি এ বিশাল বিশেব নাই মোর কোন শান্তি নাই।’’
বলাই বাহুল্য যে, যে  স্বামী তার স্ত্রীর প্রগাঢ় ভালোবাসা পায়, বিপদে সান্ত্বনা, কষ্টে সেবাযত্ন, যৌবনে পরম মিলন পায়, রাগ-অনুরাগ বা অভিমান করলে যাকে তার স্ত্রী মানিয়ে নেয় এমন  স্বামীর মত সৌভাগ্যবান  স্বামী আর কে হতে পারে? পিতা-মাতার দুআ ও স্ত্রীর প্রেমেই তো রয়েছে  স্বামীর প্রকৃত পৌরুষ। এমন নারী না হলে পুরুষের জীবন বৃথা।
‘‘প্রেমের প্রতিমা স্নেহের সাগর
করুণা-নির্ঝর দয়ার নদী,
হত মরুময়  সব চরাচর
জগতে নারী না থাকিত যদি।’’
স্বামীকে সন্তুষ্ট ও রাজী করবার জন্য ইসলাম এক প্রকার মিথ্যা বলাকেও স্ত্রীর জন্য বৈধ করেছে। স্ত্রীর মনে যতটুকু পরিমাণ স্বামীর ভালোবাসা বর্তমান,  স্বামীকে অধিক খুশী করার জন্য তার দ্বিগুণ ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করা, বরং  স্বামীর কোন কুসবভাবের কারণে ভালোবাসায় আবিলতা এলেও তা গোপন করে  স্বামীকে যদি তার প্রাণঢালা ভালোবাসার কথা মিথ্যা ক’রে ব’লে জানায় তাহলে তা দোষের নয়। তবে তার কর্ম যেন এ কথার অসত্যতা প্রমাণ না করে।
খুব কমসংখ্যক পরিবারই এমন আছে যাদের দাম্পত্য অনাবিল প্রেমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। নচেৎ অধিকাংশ সংসারই তাসের ঘর। প্রায় সব সংসারের গাড়িই চলে টানে, নচেৎ ঠেলায়। বেশীর ভাগ দাম্পত্যই সন্তান, ইসলাম অথবা সামাজিক, নৈতিক নতুবা কোন অন্য চাপের ফলে টিঁকে থাকতে বাধ্য হয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে  যদি  স্বামী-স্ত্রী উভয়ে উভয়কে মোটেই ভালো না বাসলেও যদি ‘খুব ভালোবাসি’ বলে এক অপরকে রাজী করে সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়, তবে তা মিথ্যা নয়।[28]
তবে হ্যাঁ, এ মিথ্যা যেন অন্য উদ্দেশ্যে, ধোঁকা প্রদান বা অধিকার নষ্ট করার উদ্দেশ্যে  স্বামীকে বলা না হয়। নচেৎ সে মিথ্যা প্রমাণিত হলে সামান্য প্রেমেরও শীশমহলটুকু ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
১২-  স্বামীর সংসারে তার পিতামাতা ও বোনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য।  স্বামীর মা-বাপ ও বোনকে নিজের মা-বাপ ও বোন ধারণা করে সংসারের প্রত্যেক কাজ তাদের পরামর্শ নিয়ে করা, যথাসাধ্য তাদের খিদমত করা এবং তাদের (বৈধ) আদেশ-নিষেধ মেনে চলা পুণ্যময়ী সাধবী নারীর কর্তব্য।
১৩- নিজের এবং অনুরূপ  স্বামীর সন্তান-সন্ততির লালন-পালন, তরবিয়ত ও শিক্ষা দেওয়া স্ত্রীর শিরোধার্য কর্তব্য। এর জন্য তাকে ধৈর্য, স্থৈর্য, করুণা ও স্নেহের পথ অবলম্বন করা একান্ত উচিৎ। বিশেষ করে  স্বামীর সামনে সন্তানের উপর রাগ না ঝাড়া, গালিমন্দ, বদ্দুআ ও মারধর না করা স্ত্রীর আদবের পরিচয়। তাছাড়া বদ্দুআ করা হারাম। আর তা কবুল হলে নিজের ছেলেরই ক্ষতি।[29]
স্ত্রীর উচিৎ, সন্তান-সন্ততিকে পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, সচ্চরিত্রতা, বীরত্ব, সংযমশীলতা, বিষয়-বিতৃষ্ণা, দ্বীন-প্রেম, ন্যায়-নিষ্ঠা, আল্লাহ-ভীরুতা, প্রভৃতি মহৎগুণের  উপর প্রতিপালিত ও প্রতিষ্ঠিত করা। কারণ,
মায়ের হাতেই গড়বে মানুষ মা যদি সে সত্য হয়,
মা-ই তো এ জাহানে প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়।
এই মা-ই তো পরমা, সত্তমা। এই মায়ের পদতলেই জান্নাতের আশা করা যায়। এই মা তার সন্তানকে এমন মানুষ করে তুলবে; যাতে তারা বাঁচবে ইসলাম নিয়ে ও ইসলামের জন্য এবং মরবে তো তারই পথে। যাদের মাধ্যমে সমাজে সাধিত হবে প্রভূত কল্যাণ। এরা হবে তারাই, যাদেরকে নিয়ে রসূল (সাঃ) কিয়ামতে গর্ব করবেন।
_______________________________________________________________________________________
তথ্যসূত্রঃ
[1] (ত্বাবারানী, ইবনে হিববান, সহীহ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৪নং)
[2] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৮৩৮নং)
[3] (ইবনে আবী শাইবাহ ,নাসাঈ, তাবারানী, হাকেম , প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৫পৃঃ)
[4] (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৫নং)
[5] (হাকেম , ইবনে হিববান, ইবনে আবী শাইবাহ , সহীহুল জামে ৩১৪৮ নং)
[6] (ত্বাবারানী, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫২৫৯নং)
[7] (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিববান , আদাবুয যিফাফ ২৮৪পৃঃ)
[8] (ত্বাবারানী, হাকেম , আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৮নং)
[9] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৫০নং)
[10] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৩পৃঃ)
[11] (ত্বায়ালিসী ২০৫৬, বাইহাকী ৪/৬৫-৬৬, ইবনে হিববান ৭২৫নং, মুসনাদে আহমদ ৩/১০৫-১০৬ প্রভৃতি। দেখুন, আহকামুল জানায়েয ২৪-২৬ পৃঃ)
[12] (সূরা আন-নিসা (৪) : ৩৪)
[13] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৪২নং)
[14] (তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৬২পৃঃ)
[15] (সূরা আর র‘দ (১৩) : ২৮)
[16] (আল মারআতুল মুসলিমাহ, ওয়াহ্বী সুলাইমান আল-আলবানী ১৬৯পৃঃ, সিফাতুল মু’মিনাতিস সা-দিক্বাহ, নাওয়াল বিন্ত্ আব্দুল্লাহ ৫০-৫১পৃঃ)
[17] (মুসলিম ২৭২৭নং)
[18] (বুখারী, মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ১৯ নং)
[19] (নাসাঈ, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৯নং)
[20] (ইরওয়াউল গালীল ২৬৪৬নং,ফাতাওয়াল মারআহ ৯২পৃঃ)
[21] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, প্রভৃতি, সহীহ আত্তারগীব অত্তারহীব, আল্লামা আলবানী ৯২৬-৯৩০নং)
[22] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/২৭৫-২৭৬)
[23] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ, তামবীহাতুল মু’মিনাত ১৩১-১৩৩পৃঃ)
[24] (তিরমিযী ৩৪৯৭নং)
[25] (বুখারী, মুসলিম, সহীহ আত্তারগীব অত্তারহীব ৯২৭নং)
[26] (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৭ নং)
[27] (মুসলিম ২৮১৩নং)
[28] (ফিকহুস সুন্নাহ ২/১৮৫) 
[29] (আবু দাঊদ, আল মারআতুল মুসলিমাহ ১৭৬পৃঃ)

মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০১৬

মধু-মিলন

বইঃ আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য, অধ্যায়ঃ বিবাহ ও দাম্পত্য বিষয়াবলী, অনুচ্ছেদঃ মধু-মিলন

হৃদয়ের আদান-প্রদানের এই প্রথম সাক্ষাতে যৌন-মিলন করতে চেষ্টা না করাই  স্বামীর উচিৎ। অবশ্য স্ত্রী রাজী ও প্রস্ত্তত থাকলে সে কথা ভিন্ন। স্ত্রীর কর্তব্য  স্বামীর ইঙ্গিতে সাড়া দেওয়া। এমন কি গোসলের পানি না থাকলেও স্ত্রীর ‘না’ করার অধিকার নেই।[1]

যেহেতু  স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানার দিকে ডাকে, তখন স্ত্রী যেতে অস্বীকার করলে এবং  স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটালে প্রভাতকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ স্ত্রীর উপর অভিশাপ করে থাকেন।[2]

স্ত্রী রান্নাশালে রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও (অথবা সফরের জন্য সওয়ারীর পিঠে থাকলেও)  স্বামীর ডাকে উপস্থিত হওয়া ওয়াজেব।[3]

এই মিলনে রয়েছে সদকার সম-পরিমাণ সওয়াব।[4]

একটানা নফল ইবাদত ত্যাগ করেও স্ত্রী-মিলন করা ইসলামের বিধান।[5]

এই জন্যই  স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রী নফল রোযা রাখতে পারে না।[6]

সুতরাং অন্যান্য ব্যস্ততা ত্যাগ করে সঙ্গমের মাধ্যমে উভয়ের মনে মহাশান্তি আনয়ন একান্ত কর্তব্য।

মিলনে কেবল  স্বামীর নিজের যৌনতৃষ্ণা নিবারণই যেন উদ্দেশ্য না হয়। কেবল নিজের উত্তেজনা ও কামাগ্নি নির্বাপিত করতে এবং স্ত্রীর মানসিক, শারীরিক, প্রভৃতি অবস্থা খেয়াল না করে অথবা তাকে উত্তেজিতা না করে অথবা তার বীর্যস্খলন বা পূর্ণতৃপ্তির কথা না ভেবে কেবল নিজের বীর্যপাত ও তৃপ্তিকেই প্রাধান্য দিয়ে মিলন মধু-মিলন নয়। উভয়ের পূর্ণ তৃপ্তিই হল প্রকৃত মধুর মিলন। সুতরাং সঙ্গমের পূর্বে বিভিন্ন শৃঙ্গার; আলিঙ্গন, চুম্বন, দংশন, মর্দন প্রভৃতির ভূমিকা জরুরী। নচেৎ স্ত্রী এই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হলে তার নিকট প্রেমের কোন স্বাদই থাকবে না। পতি পেয়েও উপপতির চিন্তায় দিনপাত করবে। অতএব সচেতন যুবক যেন এতে ভুল না করে বসে। নচেৎ বিয়ের আসল উদ্দেশ্য (ব্যভিচার উৎখাত) বিফল হয়ে যাবে।[7]

প্রকাশ যে, শৃঙ্গারের সময় স্ত্রীর স্তনবৃন্ত দংশন ও চোষন কোন দোষের নয়।[8]

অবশ্য একে অন্যের লজ্জাস্থান লেহন ও চোষণ অবশ্যই ঘৃণিত আচরণ।

মিলনের জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ বা সময় নেই। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এবং মনের চাহিদা থাকলে তা করা যায়। অবশ্য অধিক নেশায় স্বাস্থ্য হারানো উচিৎ নয়। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বিনা স্পর্শ ও যৌন চিন্তায় যখন যৌনাঙ্গ স্ফীত হয়ে উঠে ঠিক সেই সময়েই করা উচিৎ। তবে মনে রাখার কথা যে, একে অপরের যৌনক্ষুধা মিটাতে অসমর্থ হলে এবং যৌনবাজারে একজন গরম ও অপরজন ঠান্ডা হলে সংসারে কলহ নেমে আসে।

যেমন সঙ্গমের নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতিও ইসলামে বর্ণিত হয়নি। এই সময় করলে সন্তান নির্বোধ হয়, ঐভাবে করলে সন্তান অন্ধ, বধির বা বিকলাঙ্গ হয় ইত্যাদি কথার স্বীকৃতি ইসলামে নেই।

আল্লাহ পাক বলেন,

﴿نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ﴾

‘‘তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের শষ্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার।[9]

অতএব সমস্ত রকমের আসন বৈধ। সমস্ত বৈধ সময়ে সঙ্গম বৈধ। অমাবস্যা-পূর্ণিমা প্রভৃতি কোন শুভাশুভ দিন বা রাত নয়। এতে সন্তানের কোনও ক্ষতি হয় না।[10]

স্ত্রীর মাসিক হলে সঙ্গম হারাম। কারণ, এই স্রাব অশুচি। পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীর  নিকট সঙ্গমের জন্য যাওয়া নিষিদ্ধ।[11]

মাসিকাবস্থায় সঙ্গম করা এক প্রকার কুফরী।[12]

সহবাস করে ফেললে এক দ্বীনার (সওয়া চার গ্রাম পরিমাণ সোনা অথবা তার মূল্য, না পারলে এর অর্ধ পরিমাণ অর্থ) সদকাহ করে কাফ্ফারা দিতে হবে।[13]

এ ছাড়া এই অবস্থায় সঙ্গমে  স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের পক্ষে স্বাস্থ্যগত বিশেষ ক্ষতিও রয়েছে অনেক।[14]

অবশ্য মাসিকাবস্থায় সঙ্গম ছাড়া অন্যান্যভাবে যৌনাচার বৈধ।[15]

যেমন, এই সময় বা অন্যান্য সময় স্ত্রীর ঊরুমৈথুন বৈধ। এতে বীর্যপাত হলেও দোষ নেই।[16]

তবে স্ত্রীর পায়ুপথে (মলদ্বারে) সঙ্গম হারাম। যে ব্যক্তি এমন কাজ করে সে অভিশপ্ত।[17] এমন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকিয়েও দেখবেন না।[18] এমন কাজও এক প্রকার কুফরী।[19] সুতরাং এই সঙ্গমে স্ত্রীর সম্মত না হওয়া ফরয।

উল্লেখ্য যে, নেফাসের অবস্থাতেও সঙ্গম হারাম। গর্ভাবস্থায় যদি ভ্রূণের কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তাহলে খুবই সতর্কতার সাথে বৈধ।[20]

নির্জন কক্ষে কোন পর্দার ভিতরেই মিলন করা লজ্জাশীলতার পরিচয়। অবশ্য  স্বামী-স্ত্রী  উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ নগ্নাবস্থায় দেখতে পারে।[21]

এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই। ‘ স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা হযরত আয়েশা (রাঃ) কখনও  স্বামীর গুপ্তাঙ্গ দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হয়। সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয়’ ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়।[22]

পক্ষান্তরে আল্লাহ বলেন,

﴿هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ﴾

‘‘ওরা (স্ত্রীরা) তোমাদের লেবাস এবং তোমরা তাদের লেবাস।’’[23]

ঘুমন্ত হলেও নিজ সন্তান বা অন্য কেউ কক্ষে থাকলে সঙ্গম করা উচিৎ নয়। তবে শিশু একান্ত অবোধ হলে ভিন্ন কথা।

প্রকাশ যে, মেয়েদের  যৌন-মিলন  না  করার  সাধারণ ধৈর্য-সীমা চার মাস। তাই পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া এবং উভয়ের সম্মত চুক্তি ব্যতীত এর অধিক সময় বিরহে কাটানো বৈধ নয়।[24]

  সঙ্গমের পূর্বে নিম্নের দুআ পাঠ কর্তব্য;

بِسْمِ اللهِ، اَللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا.

উচ্চারণঃ- বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইতবা-না অজান্নিবিশ শাইতবা-না মা রাযাকবতানা।

অর্থাৎ, আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদের নিকট থেকে শয়তানকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবে তার নিকট থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।

এই দুআ পাঠ করে সহবাস করলে উক্ত সহবাসের ফলে সৃষ্টি সন্তানের কোন ক্ষতি শয়তান করতে পারে না।[25]

প্রকাশ যে, শয়তানও মানুষের সন্তান-সন্ততিতে অংশগ্রহণ করে থাকে;  যদি সঙ্গমের পূর্বে আল্লাহর নাম না নেওয়া হয় তাহলে।[26]

সঙ্গম বা বীর্যপাতের পর গোসল (মাথা শুদ্ধ সর্বশরীর ধোয়া) ফরয। তবে নগ্নাবস্থায়  স্বামী-স্ত্রী আলিঙ্গনাদি করলে, বীর্যপাত না হলে এবং মযী (বীর্যের পূর্বে নির্গত আঠাল তরল পদার্থ) বের হলেও গোসল ফরয নয়। লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু যথেষ্ট।

লিঙ্গাগ্র যোনী-মুখে প্রবেশ করালে বীর্যপাত না হলেও উভয়ের উপর গোসল ফরয। অনুরূপ লিঙ্গাগ্র যোনীপথে প্রবেশ না করিয়েও যে কোন প্রকারে বীর্যপাত করলে গোসল ফরয।[27]

স্ত্রীর ঊরু-মৈথুন করে বীর্যপাত করলে  স্বামী গোসল করবে। স্ত্রী (বীর্যপাত না হলে) গোসল করবে না। ঊরু ধুয়ে ওযু যথেষ্ট।[28]

একাধিক বার সঙ্গম অথবা গোসল ফরযের একাধিক কারণ হলেও শেষে একবার গোসলই যথেষ্ট।[29]  স্বামী-সঙ্গম করার পর-পরই স্ত্রীর মাসিক শুরু হয়ে গেলে একেবারে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর গোসল করতে পারে।[30] অর্থাৎ মাসিকাবস্থায় পূর্ব-সঙ্গমের জন্য গোসল জরুরী নয়।

প্রথমে  স্বামী গোসল করে স্ত্রীর গোসল করার পূর্বে শীতে তার দেহের উত্তাপ নেওয়া কোন দোষের নয়।[31]

একই রাত্রে বা দিনে একাধিকবার সহবাস করতে চাইলে দুই সহবাসের মাঝে ওযু করে নেওয়া উচিৎ। অবশ্য গোসল করলে আরো উত্তম। এতে পুনর্মিলনে অধিকতর তৃপ্তি লাভ হয়।[32]

নিদ্রার পূর্বে সঙ্গম করে ফজরের পূর্বে গোসল করতে চাইলে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু অথবা তায়াম্মুম করে শয়ন করা উত্তম।[33]

অবশ্য সর্বোত্তম হলো ঘুমাবার পূর্বেই গোসল করে নেওয়া।[34]  কারণ, দীর্ঘক্ষণ নাপাকে না থাকাই শ্রেয়। তবে গোসল না করে যেন কোন নামায নষ্ট না হয়। যেহেতু যথাসময়ে নামায আদায় করা ফরয।

রোযার দিনে স্ত্রীচুম্বন ও শৃঙ্গারাচারে বীর্যপাত না হলে রোযা নষ্ট হয় না।[35] যদিও প্রেমকেলিতে মযী স্খলন হয় তবুও কোন ক্ষতি নেই।[36]

স্ত্রীর  হস্তমৈথুনে বা সমকামে বীর্যপাত করলে রোযা নষ্ট হয়।[37]

স্বামী-স্ত্রী কোন প্রকার ভুলে রোযার দিনে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে পড়লে মনে পড়া মাত্র পৃথক হয়ে যাবে। এর জন্য কাযা কাফ্ফারা নেই।[38]

ইচ্ছাকৃত সঙ্গম করলে তওবা, রোযা কাযা এবং কাফ্ফারা ওয়াজেব; একটি ক্রীতদাস স্বাধীন করবে, না পারলে (যথার্থ ওজর ছাড়া) নিরবচ্ছিন্নভাবে দুই মাস একটানা রোযা পালন করবে, তা না পারলে ষাটজন গরীবকে (মাথাপিছু ১কিলো ২৫০ গ্রাম করে) খাদ্য (চাল) দান করতে হবে।[39]

অবশ্য স্ত্রী সম্মত না হলে জোরপূর্বক সহবাস করলে স্ত্রীর রোযা নষ্ট হয় না।[40]

ই’তিকাফ অবস্থায় সঙ্গম বৈধ নয়।[41]

হজ্জ করতে গিয়ে ইহরাম অবস্থায় সঙ্গম করলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে। হজ্জের সমস্ত কাজ পূর্ণ করতে হবে, মক্কায় অতিরিক্ত একটি উট ফিদয়াহ দিতে হবে এবং নফল হলেও ঐ হজ্জ আগামীতে কাযা করতে হবে।[42]

মিলনের গুপ্ত রহস্য বন্ধু-সখী বা আর কারো নিকট প্রকাশ করা হারাম। স্ত্রী-সঙ্গমের কথা যে অপরের নিকট খুলে বলে সে ব্যক্তি কিয়ামতে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ের লোকেদের দলভুক্ত হবে।[43]

এমন ব্যক্তি তো সেই শয়তানের মত, যে কোন নারী-শয়তানকে রাস্তায় পেয়ে সঙ্গম করতে লাগে, আর লোকেরা তার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখে।[44]

উল্লেখ্য যে, বিবাহ-বন্ধনের পর সারার পূর্বে  স্বামী-স্ত্রীর দেখা-সাক্ষাৎ ও মিলন বৈধ।[45]

প্রকাশ থাকে যে, বাসর রাত্রির শেষ প্রভাতে দুধ ইত্যাদি দিয়ে বাসর ঠান্ডা করার আচার ইসলামী নয়।

বরের জন্য বাসর-সকালে উঠে বাড়িতে উপস্থিত আত্মীয়-সবজনকে সালাম দেওয়া এবং তাদের জন্য দুআ করা মুস্তাহাব। আত্মীয়-সবজনেরও মুস্তাহাব, তার জন্য অনুরূপ সালাম-দুআ করা। আল্লাহর রসূল (সাঃ) এমনটি করেছেন।[46]

[1] (আল-ফাতাওয়াল মুহিম্মাহ, লিনিসাইল উম্মাহ ৯৬পৃঃ) [2] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩২নং) [3] (নাসাঈ, ত্বাহাবী, মুশকিলুল আসার, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৭নং, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫৩৪নং) [4] (মুসলিম, নাসাঈ) [5] (বুখারী মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ১৪৫নং) [6] (মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৬৯নং) [7] (অকাফাত মাআল উসরাহ, সাবরী শাহীন ৫০-৫১পৃঃ) [8] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৫৭) [9] (সূরা বাক্বারা ২/২২৩) [10] (বুখারী, মুসলিম, আদাবুয যিফাফ ৯৯-১০০পৃঃ) [11] (আলকুরআন কারীম ২/২২২) [12] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১২০-১২১) [13] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আযি ১২২পৃঃ) [14] (তুহফাতুল আরূস, ১৩৯ পৃঃ) [15] (মুসলিম, আবু দাঊদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২১-১২২পৃঃ) [16] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০) [17] (আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ) [18] (নাসাঈ, তিরমিযী) [19] (আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আদাবুয যিফাফ ১০১-১০৪পৃঃ) [20] (ফাতাওয়াল মারআহ ১০৩পৃঃ) [21] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ২/৭৬৬) [22] (দেখুন, তুহফাতুল আরূস, ১১৮-১১৯পৃঃ) [23] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭) [24] (ফাতাওয়াল মারআহ ৭৭পৃঃ) [25] (বুখারী, আবু দাঊদ, তিরমিযী, আদাবুয যিফাফ ৯৮পৃঃ) [26] (সূরা ইসরা (১৭) : ৬৪, তফসীর ইবনে কাসীর ৩/৫৪) [27] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/৮৯) [28] (জামিউ আহকামিন নিসা, ১/৯০পৃঃ) [29] (ঐ ১/১২৫পৃঃ) [30] (ঐ ১/১২৪) [31] (আদাবুয যিফাফ ১০৫ পৃঃ) [32] (মুসলিম, ইবনে আবী শাইবাহ , মুসনাদে আহমদ, আবু দাঊদ, নাসাঈ, তাবঃ, আদাবুয যিফাফ ১০৮পৃঃ) [33] (আদাবুয যিফাফ ১১৩,১১৭-১১৮ পৃঃ) [34] (ঐ১১৮পৃঃ) [35] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৫) [36] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১০৪) [37] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫০৭) [38] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/১১৩) [39] (বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৪১৩-৪১৪) [40] (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীন ১/৫৪২) [41] (সূরা আল-বাক্বারা (২) : ১৮৭) [42] (আল-ফাতাওয়া আল- ইসলামিয়্যাহ ২/২৩২) [43] (ইবনে আবী শাইবাহ , মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪২ পৃঃ) [44] (মুসনাদে আহমদ,ইবনে আবী শাইবাহ ,আবু দাঊদ,বাইহাকী,প্রভৃতি আদাবুয যিফাফ ১৪৩-১৪৪ পৃঃ) [45] (মাজাল্লাতুল বহুসিল ইসলামিয়্যাহ ২২/২০৬) [46] (নাসাঈ, আদাবুয যিফাফ ১৩৮-১৩৯ পৃঃ)

সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভ

নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত।

وَهُوَ قَوْلٌ وَفِعْلٌ وَيَزِيدُ وَيَنْقُصُ قَالَ اللهُ تَعَالَى : }لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى{ }وَيَزِيدُ اللهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى{ }وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْوَاهُمْ{ وَقَوْلُهُ }وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا{ وَقَوْلُهُ }أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيمَانًا{ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَقَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ }فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا{ وَقَوْلُهُ تَعَالَى }وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا{ وَالْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ مِنَ الإِيْمَانِ وَكَتَبَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ إِلَى عَدِيِّ بْنِ عَدِيٍّ إِنَّ لِلْإِيمَانِ فَرَائِضَ وَشَرَائِعَ وَحُدُودًا وَسُنَنًا فَمَنْ اسْتَكْمَلَهَا اسْتَكْمَلَ الإِيْمَانَ وَمَنْ لَمْ يَسْتَكْمِلْهَا لَمْ يَسْتَكْمِلْ الإِيْمَانَ فَإِنْ أَعِشْ فَسَأُبَيِّنُهَا لَكُمْ حَتَّى تَعْمَلُوا بِهَا وَإِنْ أَمُتْ فَمَا أَنَا عَلَى صُحْبَتِكُمْ بِحَرِيصٍ وَقَالَ إِبْرَاهِيمُ صلى الله عليه وسلم }وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي{ وَقَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ اجْلِسْ بِنَا نُؤْمِنْ سَاعَةً وَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ الْيَقِينُ الإِيْمَانُ كُلُّهُ وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ لاَ يَبْلُغُ الْعَبْدُ حَقِيقَةَ التَّقْوَى حَتَّى يَدَعَ مَا حَاكَ فِي الصَّدْرِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ }شَرَعَ لَكُمْ{ مِنْ الدِّينِ أَوْصَيْنَاكَ يَا مُحَمَّدُ وَإِيَّاهُ دِينًا وَاحِدًا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ }شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا{ سَبِيلاً وَسُنَّةً

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটিঃ মুখে স্বীকার এবং কাজে পরিণত করাই হচ্ছে ঈমান এবং তা বৃদ্ধি পায় ও হরাস পায়।* আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যাতে তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে ঈমান মজবুত করে নেয়- (সূরাহ্ ফাত্হ ৪৮/৪)। আমরা তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- (সূরাহ্ কাহাফ ১৮/১৩)। এবং যারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাদের অধিক হিদায়াত দান করেন- (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯/৭৬)। এবং যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ্ তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দেন এবং তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দেন- (সূরাহ্ মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)। যাতে মু’মিনদের ঈমান বেড়ে যায়- (সূরাহ্ মুদ্দাস্সির ৭৪/৩১)। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বাড়িয়ে দিল? যারা মু’মিন এ তো তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়- (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ ৯/১২৪)। এবং তাঁর বাণী, ‘‘সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর ; একথা তাদের ঈমানের দৃঢ়তা বাড়িয়ে দিল’’- (সূরাহ্ আলু-ইমরান ৩/১৭৩)। ‘‘আর এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বাড়লো’’- (সূরাহ্ আহ্যাব ৩৩/১৭৩)। ‘‘এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পেল’’- (সূরাহ্ আহ্যাব ৩৩/২২)।

আর আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা ঈমানের অংশ। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহ.) ‘আদী ইবনু ‘আদী (রহ.)-এর নিকট এক পত্রে লিখেছিলেন, ‘ঈমানের কতকগুলো ফার্য, কতকগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করে তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না। আমি যদি বেঁচে থাকি তবে অচিরেই এগুলো তোমাদের নিকট ব্যক্ত করব, যাতে তোমরা তার উপর ‘আমল করতে পার। আর যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের সাহচর্যে থাকার জন্য আমি আকাঙ্ক্ষিত নই।’

ইবরাহীম (‘আ.) বলেন, ‘তবে এ তো কেবল চিত্ত প্রশান্তির জন্য’- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/২৬)। মু‘আয (রাঃ) বলেন, ‘‘এসো আমাদের সঙ্গে বস, কিছুক্ষণ ঈমানের আলোচনা করি।’’ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াকীন হল পূর্ণ ঈমান।’ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে।’ মুজাহিদ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি আপনাকে এবং নূহকে একই ধর্মের আদেশ করেছি’’- (সূরাহ্ শূরা ৪২/১৩)। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, ‘‘অর্থাৎ পথ ও পন্থা’’- (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ ৫/৪৮)।

}قُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّي لَوْلاَ دُعَاؤُكُمْ{ وَمَعْنَى الدُّعَاءِ فِي اللُّغَةِ الإِيْمَانُ.

এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘বলে দিন, আমার প্রতিপালক তোমাদের একটুও পরোয়া করবেন না যদি তোমরা ‘ইবাদাত না কর’’- (সূরাহ্ আল-ফুরক্বান ২৫/৭৭)। অভিধানে দু‘আর অর্থ করা হয়েছেঃ ‘‘ঈমান’’।

৮. ইবন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। ১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২. সালাত কায়িম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। (৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৭)

* কোন কোন ফকীহদের নিকট ঈমান বাড়েও না কমেও না। বরং সমান থাকে। তাদের নিকট একজন নবীর ঈমান ও ইবলিসের ঈমান এক সমান। তাদের এই ‘আকীদাহ কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী। এটা মুরজি’আহ সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত ‘আকীদাহর অন্তর্ভুক্ত। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)